কলিঙ্গদেশের ঝড় বৃষ্টি
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
কলিঙ্গদেশের ঝড়-বৃষ্টি সহজ ভাষায়
কলিঙ্গের আকাশে চারিদিকে মেঘে থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে। অন্ধকার এতটাই গাঢ় যে কলিঙ্গবাসীরা নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান দিকে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণে মেঘে আকাশে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূরদিগন্তে মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনের শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যেই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। সমগ্র কলিঙ্গবাসি মেঘের গুরুগম্ভীর শব্দে কেঁপে ওঠে। ধ্বংসের আশঙ্কায় প্রমাদ গুনতে শুরু করে প্রজারা। প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ঘনঘন মেঘের গর্জনের সঙ্গে ঝড়ের প্রবল তান্ডব অবিরাম চলছে । বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এদিক ওদিক পালাতে শুরু করে । সমগ্র সবুজ প্রকৃতি ধুলায় ঢেকে যায়। ঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে খেতের ফসল নষ্ট হতে দেখে প্রজারা ভয় পায় । মনে হয় আটটি বিশাল হাতি যেন বৃষ্টিধারায় ভাসিয়ে দিতে চায় সমগ্র কলিঙ্গদেশকে। ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানির সঙ্গে তীব্রভাবে বাজ পড়তে থাকে। মনে হয় যেন বিশাল হাতি বারবার শুঁড়ের দ্বারা জলবর্ষণ করে চলেছে। সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন হয়ে পড়ায় জল ও স্থলের সীমারেখা হারিয়ে গেছে । মেঘের তীব্র গর্জনে আওয়াজে কেউ কারো কথা শুনতে পায় না ৷ সন্ধ্যা, দিন এবং রাত্রির তফাৎ টুকু দূর হয়ে শুধুই অন্ধকারে ছেয়ে থাকে কলিঙ্গদেশ। সকল প্রজা বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে তখন ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। প্রবল ঝড়বৃষ্টির চলাকালীন সূর্যের আলো কলিঙ্গে দেশে প্রবেশ করতে পারে না। আশ্রয় হারিয়ে গর্ত ছেড়ে সাপ জলে ভেসে বেড়ায়। জল-স্থলের বিভেদ মুছে দিয়ে প্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমগ্র কলিঙ্গ দেশ। সাত দিন টানা বৃষ্টিতে শস্য, ঘরবাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতো শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়তে থাকে। মনে হচ্ছে যেন দেবী চন্ডীর আদেশে বীর হনুমান সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দেন। পর্বতের মতো বিশাল উঁচু জলের ঢেউ-এ ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। তীব্র জলোচ্ছ্বাসে নদনদী নগরে প্রবেশ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শ্রীকবিকঙ্কণ তাঁর ‘অম্বিকামঙ্গলে এই বিধ্বংসের কাহিনি গান আকারে সকলের কাছে তুলে ধরেন ।
প্রশ্ন
কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও
1. কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশটি কার লেখা, কোন্ কাব্যের অন্তর্গত?
উত্তর:, ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশটি মধ্যযুগের বিশিষ্ট কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী লেখা 'অম্বিকামঙ্গল' কাব্যের অন্তর্গত।
2. মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি কী কী নামে পরিচিত?
উত্তর:, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি 'অভয়ামঙ্গল', 'চণ্ডিকামঙ্গল', 'কবিকঙ্কণ চণ্ডী', ‘অম্বিকামঙ্গল’ প্রভৃতি নামে পরিচিত ।
3. মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটির কয়টি খণ্ড ও কী কী?
উত্তর: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটির দুটি খণ্ড—আখেটিক খন্ড এবং বণিক খন্ড |
4. ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কোন্ খণ্ডের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত।
5. “দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার ||”—কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না কেন ?
উত্তর: চারদিকের আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হওয়ায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে, ফলে কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না।
6. উচ্চনাদে কলিঙ্গে কীসের ডাক শোনা গিয়েছে?
উত্তর: ঘন মেঘাচ্ছন্ন কলিঙ্গের আকাশে উচ্চনাদে মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন শোনা গিয়েছে।
7 .“প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ ।”— মন্তব্যটির অর্থ লেখো।
উত্তর: চারদিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঘনঘন মেঘের গর্জনে প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
8. “হুড় হুড় দুড় দুড় বহে ঘন ঝড়।”—উক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: মেঘের প্রবল গর্জন এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রবল ঝড় বইছিল তা তা ঘনঘন ঝড় ও ঘরবাড়ি দূরমুস করে দিচ্ছে এই ভয়ানক রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।
9. “বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।”—কোন্ বিপাকে প্রজারা পালাল?
উত্তর: মুষলধারায় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভয়ংকর ঝড়ের তাণ্ডবে আসন্ন বিপদের কথা ভেবে প্রজারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালান।
10. “... প্রজা চমকিত।”— প্রজা চমকিত হল কেন?
উত্তর: বিধ্বংসী ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে কলিঙ্গ দেশে সমগ্র প্রকৃতি ধুলোয় ঢেকে যায় এবং শস্যখেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় প্রজা রা চমকিত হয়।
11. চারদিকে মেঘে জল দেয় কারা?
উত্তর: কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সময় চারদিকে মেঘে জল দিয়েছিল ‘অষ্ট গজরাজ' বা আটটি হাতি বিশিষ্ট ।
12 . জলধারার বর্ষণকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছে?
উত্তর: জলধারার প্রবল বর্ষণকে কবি-গজ অর্থাৎ হাতির শুঁড় দ্বারা জল বর্ষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যেন মনে হচ্ছে আটটি হাতি তাদের সুর দিয়ে প্রবল বর্ষণ করাচ্ছে।
13. “পথ হইল হারা।।”— পথ কীভাবে হারাল?
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাতে কলিঙ্গে প্লাবন সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে স্থলভূমি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পথ হারিয়ে যায় |
14. “কারো কথা শুনিতে না পায় কোনো জন।।”—কারো কথা কেউ শুনতে না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বারংবার মেঘের প্রবল গর্জনে কলিঙ্গবাসীরা কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিল না |
15. কলিঙ্গবাসী বিপদে কার কথা স্মরণ করেছেন?
উত্তর: ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কলিঙ্গবাসী বজ্রনিবারক জৈমিনি ঋষির কথা স্মরণ করেছেন।
16. “না পায় দেখিতে কেহ রবির কিরণ।”—রবির কিরণ দেখতে না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: ভয়ংকর কালো মেঘে চারদিক ঢেকে গিয়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কেউ সূর্যরশ্মি দেখতে পাচ্ছিল না।
17. গর্ত ছেড়ে কারা জলে ভেসে বেড়াচ্ছে?
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কলিঙ্গদেশ জলমগ্ন হওয়ায় গর্ত ছেড়ে সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে।
18. কলিঙ্গদেশে কতদিন টানা বৃষ্টিপাত হয়েছিল ? উত্তর: কলিঙ্গদেশে টানা সাত দিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল । সাত দিনের বৃষ্টিতে শস্যখেত জলে নিমজ্জিত হয়েগেছে।
19. সাত দিন বৃষ্টিতে কৃষিকাজ ও ঘরবাড়ির কী ক্ষতি হয়েছিল?
উত্তর:ফসল নষ্ট হয়ে গেল এবং প্রবল শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেল ।
20. কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশে শিল পড়াকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: 'কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশে বড়ো আকারের শিল পড়াকে ভাদ্র মাসে তাল পড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
21. চন্ডীর আদেশে বীর হনুমান কী করেছেন?
উত্তর:, দেবী চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান কলিঙ্গদেশের সমস্ত মঠ, অট্টালিকা ধ্বংস করেছেন।
22. কলিঙ্গদেশের মঠ ও অট্টালিকা ভাঙার জন্য চণ্ডী কাকে আদেশ দিয়েছিলেন?
উত্তর: কলিঙ্গদেশের মঠ ও অট্টালিকা ভাঙার জন্য দেবী চণ্ডী বীর হনুমানকে আদেশ দিয়েছিলেন।
23. “উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল।”-এর কারণ কী? উত্তর:পর্বততুল্য নদীর ঢেউ-এর দাপটে কলিঙ্গদেশের বাড়িঘর জলে ভাসতে ভাসতে টলমল করছিল।
কমবেশি অনাধিক ৬০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ৩
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. “দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।।”—কারোর অঙ্গ দেখতে না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: আলোচ্য অংশটি মুকুন্দরাম রচিত কলিঙ্গদেশের ঝড় বৃষ্টি নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে ।
কলিঙ্গদেশে হঠাৎই ঝড় বৃষ্টির সঙ্গে ভয়ানক প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দেয়। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায়। কালো মেঘের বুক চিরে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। চারিদিকে কালো মেঘের সমাবেশের ফলে সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। অন্ধকার এতটাই গাঢ় হয়ে ওঠে যে, তা ভেদ করে প্রজারা নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলেন না।
2. “ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।”—উদ্ধৃতাংশটির
তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি মুকুন্দরাম রচিত কলিঙ্গদেশের ঝড় বৃষ্টি নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে ।
কলিঙ্গদেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি কলিঙ্গবাসীর সর্বনাশ ডেকে আনে। উদ্ধৃতাংশটিতে সেই ভয়াল বিপর্যয়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কলিঙ্গদেশে আকাশের উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ ঈশান কোণে মেঘের ঘনঘটায় চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। সেই মেঘের বুক চিরে নিরন্তর বিদ্যুতের ঝিলিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে কলিঙ্গবাসীরা শুধুমাত্র ঈশান কোন অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিকে মাঝেমধ্যেই বিদ্যুতের ঝলকানি দেখতে পাচ্ছিল |
3. চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল।।”—মুষলধারে জল বর্ষণের কারণ কী?
উত্তর: আলোচ্য অংশটি কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টির নামক কবিতার অংশ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ।
‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশের উপরিক্তে কলিঙ্গদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। কলিঙ্গদেশের আকাশ এক ঘন, কালো মেঘে ছেয়ে যায়। গাঢ় অন্ধকারে নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পায়না কলিঙ্গবাসী । ঈশান কোণে ঘন মেঘের সমাবেশে চারদিক অন্ধকারে ঢাকা পড়ে প্রবল মেঘের গর্জন, ঘনঘন বিদ্যুতের ঝিলিকে পৃথিবী কেঁপে ওঠে। দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর আওয়াজ শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যে সারা আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘের আচ্ছাদনে। তারপরই আকাশভাঙা মেঘে প্রবল বর্ষণ শুরু হয় কলিঙ্গদেশে ।
4. “কলিঙ্গে উড়িয়া মেঘ ডাকে উচ্চনাদ।”—কলিঙ্গের অবস্থান উল্লেখ করে উদ্ধৃতাংশটির ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টির নামক কবিতার অংশ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ।
বর্তমান ওড়িশার বেশির ভাগ অংশ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর ভাগ এবং মধ্যপ্রদেশের কিছুটা অংশ জুড়ে ছিল প্রাচীন এই কলিঙ্গপ্রদেশ। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়- বৃষ্টি' কাব্যাংশে কলিঙ্গদেশে ভয়াবহ প্লাবনের বর্ণনা করা হয়েছে | কলিঙ্গের আকাশ সহসা ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় । ঈশান কোণে মেঘের আড়ম্বরে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায় । দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই কালো মেঘরাশিতে আকাশ ঢেকে যায়। মেঘের প্রবল গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। সমগ্র কলিঙ্গ মেঘের গুরুগম্ভীর শব্দে কেঁপে ওঠে।
5. “প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।”—এখানে প্রজাদের বিষাদের কারণ কী?
উত্তর: আলোচ্য অংশটি কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টির নামক কবিতার অংশ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ।
উপরিক্ত মন্তব্যটি ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে কলিঙ্গদেশের প্রজাদের কথা বলা হয়েছে। কলিঙ্গদেশের আকাশে সহসা বিপুল মেঘরাশির সমাবেশ ঘটে। ঈশান কোণে জমাট বাঁধা মেঘ সারা আকাশ ঢেকে ফেললে সমগ্র কলিঙ্গে অন্ধকার নেমে আসে। উত্তরের প্রবল বাতাসে দূরপ্রান্ত থেকে মেঘের গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে।
কমবেশি ১২০ শব্দের মধ্যে পূর্ণমান ৫
1.‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশের বিষয়বস্তু লেখো।
উত্তর: ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশটি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘অভয়ামঙ্গল'-এর আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত।
কলিঙ্গের আকাশে চতুর্দিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে কলিঙ্গ নগর এমন অন্ধকারে ঢেকে যায় যে, কলিঙ্গবাসীরা নিজেদের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পায় না। উত্তর-পূর্ব কোণে প্রবল মেঘের সমাবেশের সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। মেঘের গম্ভীর গর্জনের সঙ্গেই প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বারবার বিপদের আশঙ্কা করে প্রজারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ধুলায় আচ্ছাদিত হয় সবুজ প্রকৃতি। জলে নিমজ্জিত কৃষিখেত নষ্ট হওয়ায় প্রজারা আশঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের ঝলকানি, প্রবল বজ্রপাতের সঙ্গেই চলতে থাকে মুষলধারে বর্ষণ। মেঘের গর্জনে প্রজারা কেউ কারও কথা শুনতে পর্যন্ত পাচ্ছে না । অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে দিন ও রাত্রির বিভাজন মুছে যায়। বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করে কলিঙ্গবাসীরা মনে করে এই জমিনেই তাদেরকে এ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে তাই তারা এ বিপদের সময় ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করছে। স্থলভাগ জলভাগে পরিণত হয়ে যাওয়ায় এমনভাবে জলপূর্ণ হয়েছে সাপ জলে ভাসতে থাকে। শস্যক্ষেত্র এবং ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। ভাদ্র মাসের তালের মতো বড়ো শিল পড়তে থাকে ঘরের চাল ভেদ করে। পর্বততুল্য নদীর ঢেউ-এ ঘরবাড়ির অবস্থা হয় শোচনীয়। শ্রীকবিকঙ্কণ তাঁর অম্বিকামঙ্গল-এ এই ভয়াবহ ঝড়বৃষ্টির আখ্যানই গান আকারে শুনিয়েছেন |
2. কলিঙ্গে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে তার বর্ণনা দাও।
অথবা, কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কবিতায় প্রলয়ের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
অথবা, কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কবিতায় কলিঙ্গে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছিল তা কীভাবে কলিঙ্গবাসীর জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিল তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর:। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ডের অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশে দেবী চণ্ডী তাঁর কৃপাধন্য ব্যাধ কালকেতু নির্মিত গুজরাট নগরে বসতি প্রতিষ্ঠার জন্য কলিঙ্গে প্রলয় ঘটান। 'কলিঙ্গের আকাশে ঈশান কোণে মেঘ জমা হয়। ঘনঘন ‘বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। দূরদিগন্তে মেঘের গম্ভীর ধ্বনির মেঘের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে। ঝড়ের দাপটে শস্য খেত এবং সবুজ ‘গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। আটটি দিক্ -হস্তী যেন বৃষ্টি ধারায় সব “ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। প্রবল বর্ষণে পথঘাট জলমগ্ন হয়। ঘোর অন্ধকারে দিন-রাত্রির পার্থক্য মুছে যায়। জলমগ্ন রাস্তায় সাপ ভেসে বেড়াতে থাকে। ভীত প্রজারা ঋষি জৈমিনি কে স্মরণ করতে থাকে। সাত দিন অবিরাম বর্ষণের ফলে কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের তালের মতো বড়ো আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে। সমস্ত নদনদী কলিঙ্গের দিকে ছুটে আসে দেবীর আদেশে। পর্বত তুল্য ঢেউ-এর আঘাতে বাড়িঘর মাটিতে পড়ে যায়। দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায়, ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় অবশেষে কলিঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়।
0 Comments