ভরদুপুরে কবিতা । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী । প্রশ্ন ও উত্তর । ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা । অধ্যায় - ১ । Bhardupure Class -6 Bangali Poem Question And Answers

     ভরদুপুরে ( কবিতা ) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

    ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা - অধ্যায় - ১ - Class - ( VI )








  -কবি পরিচিতি-

বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চন্দ্রা গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা জিতেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক । গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনা শেষ করে কবি চলে আসেন কলকাতায়, ভর্তি হন কলকাতার স্কুলে । এরপর তিনি বঙ্গবাসী ও সেন্ট পলস কলেজে পড়াশোনা করেন । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায় । ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দ মেলার সম্পাদক হন । সাহিত্যের অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে 'তারাশঙ্কর পুরস্কার', ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের সাহিত্য 'অকাডেমী পুরস্কার', ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে 'আনন্দ পুরস্কার', ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে 'উল্টো রথ পুরস্কার' লাভ করেন । তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলি হল নীল নির্জন, অন্ধকার বারান্দা,প্রথম নায়ক, 'উলঙ্গ রাজা, ইত্যাদি । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছোটদের জন্য বেশ কিছু ছড়াও কবিতা লিখেছেন । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মকথার নাম নীরবিন্দু ।২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।




শব্দার্থ - আদর : খাতির, যত্ন ।

             গালচে : কার্পেট, ফরাশ ।

               বিশ্বভূবন: বিশ্বপ্রকৃতি, সমস্ত পৃথিবী । 

                                               

                            -সারসংক্ষেপ-

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, তার "ভরদুপুরে" কবিতায় গ্রাম বাংলার এক অলস দুপুরের চিত্র এঁকেছেন । গ্রীষ্মের দুপুরে একটি অশ্বত্থ কাজ যেন পথিকজনের ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের নিচে নরম ঘাসের গালিচা (কার্পেট) পাতা রয়েছে । দূরের মাঠে গরু বাছুর চড়ছে । অশ্বত্থ গাছের নিচে শুয়ে রাখাল ছেলে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখছে । নদীর ধারে যেন একটা বড়ো নৌকা বাঁধা রয়েছে। তার মধ্যে শুকনো খড়ের আঁটি বোঝাই করে রাখা রয়েছে । চারদিকে কেউ কোথাও নেই। এই নির্জন দুপুরে বাতাস উড়িয়ে চলেছে সাদা মিহি ধুলো। "ভরদুপুরে" গ্রামের লোকজন যে যার ঘরে ঘুমোচ্ছে। গ্রামজুড়ে এক অদ্ভুত নিরবতা বিরাজ করছে। তাই এই নির্জন দুপুরে শুধু মানুষই নয়, বিশ্বভুবন অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতিও যেন ঘুমিয়ে রয়েছে বলে কবি মনে করেছেন। যার অনুভব করার ক্ষমতা আছে, সে-ই শুধু বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের কথা বুঝতে পারে।    

                    - নামকরণ -

নামকরণের মধ্য দিয়েই কবি বা লেখক পাঠকদের তাঁর রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা আগাম আভাস দিয়ে থাকেন। তাই যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘ভরদুপুরে' কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার এক নির্জন দুপুরের অলস, শান্ত, ছায়াময় রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রীষ্মের প্রখর রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ক্লান্ত পথিকদের একটা আশ্রয় চাই। গ্রামের অশ্বত্থ গাছটি ছাতার মতো পথিকদের ছায়া দান করে। গাছের নীচের নরম গালিচার মতো ঘাসের ওপর পথিকরা আশ্রয় নেয়। দূরে মাঠের মাঝে গোরুবাছুর গুলোকে চরতে দিয়ে ক্লান্ত রাখাল বালক একটা গাছের নীচে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। শুয়ে শুয়ে সে নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা দেখছে। নদীর ধারে বাঁধা খড় ভরতি একটা ব্যস্ততাহীন নৌকা গ্রাম্য দুপুরের আলস্যকে যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দুপুরের এলোমেলো হাওয়ায় উড়ছে মিহি সাদা ধুলো। লোকজন আলস্যভরে যে যার ঘরে ঘুমোচ্ছে। কবির অনুভব, শুধু মানুষই নয়, সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতিই যেন এই নির্জন, অলস দুপুরে তার আঁচল বিছিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। কবির মতে খুব কম লোকই বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের খবর রাখে। আলোচ্য কবিতায় গ্রামবাংলার এক নির্জন, উদাস দুপুরের অপূর্ব বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তাই কবিতাটির নামকরণ ‘ভরদুপুরে' বিষয় অনুযায়ী সার্থক হয়েছে।


১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও ।

১.১ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান কোথায় ?

 উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রাম।

১.২ তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো। 

 উত্তর: কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থ হল 'নীল নির্জন’ ও ‘কলকাতার যীশু'।

২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও । 

২.১ ‘অশথ গাছ’-কে পথিকজনের ছাতা বলা হয়েছে কেন ? 

উত্তর: কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর রচিত "নীল নির্জন" কাব্য থেকে "ভরদুপুরে" কবিতাটি নেওয়া হয়েছে ।

আলোচ্য অংশে  ছাতার মতো অশ্বত্থ গাছটি ও পথিকদের রোদ-বৃষ্টির থেকে আড়াল করে বলে তাকে পথিকজনের ছাতা বলা হয়েছে। 

২.২ রাখালরা গাছের তলায় শুয়ে কী দেখছে? 

 উত্তর: কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর রচিত "নীল নির্জন" কাব্য থেকে "ভরদুপুরে" কবিতাটি নেওয়া হয়েছে ।

আলোচ্য অংশে রাখালরা অশ্বত্থ গাছের তলায় শুয়ে মাথার ওপরে নীল আকাশে মেঘেদের আনাগোনা দেখছে ।

২.৩ নদীর ধারে কোন দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে ?

উত্তর: কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর রচিত "নীল নির্জন" কাব্য থেকে "ভরদুপুরে" কবিতাটি নেওয়া হয়েছে ।

আলোচ্য অংশে নদীর ধারে শুকনো খড়ের আঁটি বোঝাই করা একটা বড় নৌকা বাঁধা থাকার দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে ।


সপ্তম শ্রেণির ইংরেজির উচ্চারণ ও অনুবাদ 

দেখার জন্য এখানে  Click Here


৩. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো ।

৩.১ “আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে”— কবির এমন ভাবনার কারণ কী ?

উত্তর: ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এক অলস, শান্ত গ্রাম্য দুপুরের ছবি এঁকেছেন। পথিকজনের আশ্রয়স্থল: ছাতার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা অশ্বত্থ গাছ। তার নীচে ঘাসের গালিচা পাতা। পথিকেরা সেখানে আশ্রয় নেয়। দুরে মাঠের মাঝে গোরুবাছুরগুলোকে চরতে দিয়ে এক রাখাল গাছের নীচে শুয়ে আকাশ দেখছে। মায়াময় পরিবেশ: নদীর ধারে খড়ের আঁটি বোঝাই নৌকা রয়েছে। নীল আকাশের বুকে একটি সাদা মেঘের আনাগোনা এবং বাতাসের ধুলো ওড়ানো—সব মিলেমিশে যেন এক উদাস মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই নির্জনতা সমগ্র পরিবেশটিকে আরও নিশ্চুপ করে তুলেছে। ঘুমে আচ্ছন্ন বিশ্বপ্রকৃতি: কবির তাই মনে হয়েছে বিশ্বপ্রকৃতিও যেন সব কিছু ভুলে তার সবুজ আঁচলখানি বিছিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষ আর প্রকৃতি যেন একইসঙ্গে পাড়ি দিয়েছে ঘুমের দেশে। তাই কবি লিখেছেন—“আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে।” 

৩.২ ‘ভরদুপুরে' কবিতায় গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতায় ফুটে-ওঠা সেই ছবিটি কেমন লেখো।

উত্তর:  ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একটি আলস্যমাখা শান্ত গ্রাম্য দুপুরের বর্ণনা দিয়েছেন। পথিকজনের ছাতা: গ্রীষ্মের দুপুরের ছবি আঁকতে গিয়ে প্রথমেই কবি একটি অশ্বত্থ গাছের কথা তুলে ধরেছেন। রোদজলে ছাতা যেমন মানুষকে রক্ষা করে, তেমনিভাবেই গ্রামের এই গাছটিও দারুণ গ্রীষ্মে পথচলতি মানুষকে ছায়া দান করে। সবুজ ঘাসের বিছানা : কবির মনে হয়েছে, প্রকৃতি যেন ওই গাছের তলার পথিকদের আরামের জন্য সবুজ ঘাসের বিছানা পেতে রেখেছে। সেখানে শুয়ে রাখালবালক দেখে কেমন করে সাদা মেঘের দল নীল আকাশটাকে ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে। অলস শান্ত দুপুর; নদীর পাড়ে বাঁধা রয়েছে কাদের একটা খড়বোঝাই বড়ো নৌকা। নির্জন এই কর্মহীন দুপুরে বাতাসে উড়ছে মিহি সাদা ধুলো। এরকম অলস দুপুরবেলা গ্রামের লোকজন যে যার ঘরে গভীর ঘুমে মগ্ন। মায়ার বাঁধনে বিশ্বভুবন: কবির মতে, নিস্তব্ধ দুপুরের আলস্যভরা মায়ার বাঁধনে বিশ্বভুবন বা বিশ্বপ্রকৃতিও যেন ধরা দিয়েছে। তাঁর মনে হয়েছে, এই ভরদুপুরে মানুষের মতো প্রকৃতিও যেন তার সবুজ আঁচলখানি পেতে শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। শেষের কথা: এভাবেই কবি টুকরো টুকরো দৃশ্যের মধ্য দিয়ে গ্রামবাংলার অলস দুপুরের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

৬ . নীচের বাক্য বা বাক্যাংশগুলির থেকে উদ্দেশ্য ও বিধেয় চিহ্নিত করে উদ্দেশ্য অংশের সম্প্রসারণ করো।

৬.১ ওই যে অশথ গাছটি, ও তো পথিকজনের ছাতা।

উত্তর: উদ্দেশ্য—ওই যে অশথ গাছটি, ও তো
বিধেয়—পথিকজনের ছাতা।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ—নদীর ধারের ওই যে বহুদিনের পুরোনো অশথ গাছটি, ও তো
৬.২ কেউ কোথা নেই, বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলো। উত্তর: প্রথম বাক্যাংশ—কেউ কোথা নেই

উদ্দেশ্য—কেউ
বিধেয়—কোথা নেই
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ—গ্রীষ্মের দুপুরে আমাকে রাস্তাটা চিনিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই ।

৬.৩ আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে। উত্তর: উদ্দেশ্য—

বিশ্বভুবন বিধেয়—আঁচল পেতে এইখানে ঘুমোচ্ছে। উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ—ভরদুপুরে বিশ্বভুবন



Post a Comment

0 Comments